পরপর দুটি স্মৃতিকথা পড়া হয়। প্রথম বাশারাত পীর লিখিত ‘কার্ফ্যিউড নাইট’ এবং সেই সূত্রে রেফারেন্স পেয়েই বিপ্রতীপের আখ্যান রাহুল পন্ডিতা লিখিত ‘আওয়ার মুন হ্যাজ ব্লাড ক্লটস’। পীরের লেখা আমাকে আমূল কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। আফস্পা নামক আইনটি এবং সেই রক্ষাকবচের আড়ালে কাশ্মীর বা মণিপুরে ভারতীয় সেনার দানবীয় রূপের কিছু কিছু কথা জানা ছিল, জানা ছিল না এই ভয়াবহ অত্যাচার আর অবিশ্বাসের আবহাওয়ার। জানা ছিল না সরকার তথা সেনাবাহিনী অথবা সন্ত্রাসবাদী তথা স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর এই দুই পক্ষের মধ্যে কোন একটির আওতায় থাকতে বাধ্য প্রতিটি মানুষ। জানা ছিল না এমনকি পক্ষাবলম্বনের পরেও সেই পক্ষের মধ্যে থাকতে পারে অজস্র ছোট পক্ষ যাদের মধ্যের বাদানুবাদে যেকোন মুহূর্তে বিপন্ন হতে পারে মানুষের সর্বস্ব। প্রায় নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে পীর লিখে গেছেন কাশ্মীরের অসহায় বিপন্ন দিনরাতের জ্বলেপুড়ে যাওয়ার কাহিনী। পন্ডিতা নিজে কাশ্মিরী পন্ডিত, লেখা সত্যি বলতে কি বড় বেশী পার্টিজান, খুব যে ভাল লেগেছে পড়তে তা নয়, কিন্তু এ বইও আমার জন্য আই ওপনার। কাশ্মীরি পন্ডিতদের আতঙ্ক ও অসহায় পলায়ন ঠিক এভাবে জানা ছিল না। ... ...
সত্যেন সেন এই বিদ্রোহ নিয়ে লিখেছেন অসাধারণ এক উপন্যাস বিদ্রোহী কৈবর্ত। আমার জ্ঞান চক্ষু উন্মোচিত হয়েছে এই উপন্যাস পড়েই। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস তো অনেকেই পড়ছি, আমি এইটাও তেমন কিছুই আশা করে বই নিয়ে যখন বসলাম তখন একটা ঝাটকা খেলাম। সত্যেন সেনের লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম। লেখার ভঙ্গি আমার পরিচিত। কিন্তু এখানে যেন সব অন্য রকম। এক টানে আমাকে নিয়ে চলে গেলেন তৎকালীন গৌড় জনপথে! কৈবর্ত প্রধান দিব্বোক যে সেই সময় এবং অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অসাধারণ চরিত্রের নেতা ছিলেন তা যেন দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। ক্ষমতা নিয়েই কৈবর্ত রাজা দিব্বোক ঘোষণা দেন এতদিন রাজা কর নিত ফসলের ছয় ভাগের এক ভাগ, এবার থেকে নিবে আট ভাগের এক ভাগ! এইটা ওই সময়ের হিসেবে বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা, কৈবর্তরা তাদের দেবতা ওলান ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নরবলি দিত, সবার অমতে দিব্বোক প্রথম বছরেই নরবলি বন্ধ ঘোষণা করেন। ধর্ম বড় নেশা, এই নেশায় মাতালরা এইটা মেনে নিতে রাজি ছিল না। দিব্বোক প্রথম বছরে পারে নাই কিন্তু পরবর্তীতে দিব্বোক এত জনপ্রিয় হয় যে জনগণ দিব্বোককে খুশি করতে নিজেরাই নরবলি বন্ধ করে দেয়। ... ...
বিশ্বায়ন ও নারী প্রবন্ধটি আমার মতে এই বইয়ের সেরা প্রবন্ধ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর থেকে শুরু করে পৃথিবীব্যপী মেয়েদের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব, পুঁজির প্রসারের সাথে সাথে নারী ও শিশুদের খাদ্যসুরক্ষা ও পুষ্টির অধিকার সংকুচিত হয়ে আসা, জলের অধিকার প্রায় হারিয়ে ফেলা এই সবই উঠে এসেছে। লেখক তাঁর সহমর্মিতার হাত বুলিয়ে গেছেন সেইসব লক্ষ লক্ষ মেয়েদের প্রতি যাঁরা একই সাথে রোজগার করতে, গৃহকর্ম সামলাতে বৃদ্ধ ও অসুস্থের সেবা করতে করতে লুকিয়ে ফেলতে বাধ্য হন নিজের স্ট্রেস, হারিয়ে ফ্যালেন নিজস্ব অবকাশ। লেখকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে ফেলেছে মেয়েদের সর্বত্রগামী উপস্থিতি, বিশেষত সার্ভিস সেক্টরে, ব্যাংকিং ইত্যাদির বিভিন্ন পদে মেয়েদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ কাজগুলোকে করে তুলেছে কম গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা সময় দিচ্ছেন বেশী, পয়সা পাচ্ছেন ঢের কম। এ এক অদ্ভুত অলাতচক্র। ... ...
সিনেমা রিভিউ ... ...
পাঠপ্রতিক্রিয়া ... ...
পাঠসমলোচনা ... ...
শিল্পী সুলতানের কথা আমার বলার অধিকার আছে? আমি জানি না। উনার কিংবদন্তী কাজ গুলো সম্পর্কে তো খুব অল্প জানি। এদিক সেদিকে কিছু কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা আমাকে করে ছিল। ক্ষেতে খামারে কাজ করছে কিন্তু একেকজনের কী পেশিবহুল শরীর একেকজনের। সুলতান লেখককে ব্যাখ্যা করেছে কেন তার চরিত্ররা এমন দারুণ স্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি বলছেন বাঙালিকে দুর্বল ভাবার কোন সুযোগ নাই। যারা প্রতি বছর ঝড় বন্যার সাথে যুদ্ধ করে ক্ষেতে খামারে কাজ করে টিকে আছে তারা কীভাবে দুর্বল হয়? তিনি এই খেটে খাওয়া মানুষদের ভিতরের শক্তির ছবি এঁকেছেন! তখন প্রশ্ন আসছে উনার আগের ছবিতে কেন এমন চরিত্র আঁকেন নাই? তখন কি তিনি তেমন ভাবতেন না? সুলতান জবাব দিয়েছেন তখনো তিনি তেমনই ভাবতেন। কিন্তু আঁকেন নাই। কেন? কারণ হচ্ছে তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি! মুক্তিযুদ্ধের পরে উনি যা এঁকেছেন সব জায়গায়ই এমন পেশিবহুল মানুষের আনাগোনা। উনার কথা হচ্ছে পরাধীন একটা জাতিকে এমন শক্তসমর্থ করে আঁকলে তা বিশ্বাস যোগ্য হত না। কী দারুণ না! ... ...
বছর তিরিশ আগে এক তরুণ ডাক্তার গিয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বেল্পুকুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা এক আশ্চর্য নেই-রাজ্য। এরপর কীভাবে তিনি ভোল পাল্টালেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই কথাই তিনি লিখেছেন একটি ছোট্ট বইতে। বইটি আমাকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে। বইটি পড়ার সূত্রে আসা কিছু ভাবনা ভাগ করে নিলাম পাঠকদের সঙ্গে। ... ...
একই সাথে গবেষণা এবং স্মৃতিকথার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বারোটি পরিচ্ছদের কাহিনী-মালা। প্রতিটি পরিচ্ছদ-ই এক বা একাধিক কাহিনী। টানটান লেখার বাঁধুনিতে ছোট ছোট স্কেচ। প্রতিটি পরিচ্ছদের শেষে উল্লেখ করেছেন সেই বই বা তথ্যের যা তাঁকে ঐ পরিচ্ছদটি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। ফলে সমগ্র সৃষ্টিটি হয়েছে চুম্বকে এক বিশ্বাসঘাতক সময়ের বেদনা আর তার থেকে উত্তরণের এক মনোগ্রাহী দলিল। এ এক আশ্চর্য সমন্বয়। ... ...